বেগুনকোদর, আতঙ্কের আরেক নাম




Monimala. মনিমালা। show

Summary: <p>পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছোট্ট একটা স্টেশন। বেগুনকোদর রেলওয়ে স্টেশন ভারতীয় দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের রাঁচি রেলওয়ে বিভাগের একটি রেলওয়ে স্টেশন।স্টেশনটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার ঝালদা ও বেগুনকোদর শহরের মধ্যে রেলযোগাযোগ পরিচালনা করে।চারপাশের অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে এই স্টেশন মন ভরিয়ে দেওয়ার মতো। কিন্তু এক অজানা আতঙ্কে এই স্টেশন খালি পড়ে রয়েছে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘ভূতুড়ে স্টেশন’। রেল মানচিত্রে এই স্টেশনের নাম বেগুনকোদর। পাকা ইমারতের স্টেশন বিল্ডিং, রেল কোয়ার্টার্স—সবই রয়েছে। এক সময় নাকি স্টেশন লাগোয়া বড় বাজারও ছিল। এখন সে সবই অতীত। রেললাইনের ধারে সারা রাত হানাবাড়ির মত পড়ে থাকে পুরুলিয়ার জেলার কোটশীলার এই বেগুনকোদর স্টেশন।পুরুলিয়ার বেগুনকোদর রেলস্টেশন। দেশের রহস্যজনক ভুতুড়ে স্টেশনগুলির মধ্যে অন্যতম এই রেলস্টেশন। আজ থেকে নয়, বহু বছর থেকে পুরুলিয়ার এই বেগুনকোদর স্টেশন ভূতের তকমা গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।শোনা যায়, আজ থেকে কয়েক দশক আগে এই বেগুনকোদর স্টেশন তৈরী হওয়ার পর একজন স্টেশন মাষ্টার সস্ত্রীক সেখানে বদলি হয়ে রেলের চাকরি নিয়ে আসেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কোনও এক রাতে ঘটে গেল এক ভয়াবহ ঘটনা। রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল ওই স্টেশনমাষ্টার ও তাঁর স্ত্রীর। পরে স্টেশন সংলগ্ন একটি কুয়ো থেকে তাদের দেহ উদ্ধার হয় বলেও শোনা যায়। কেউ কেউ বলেন, আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছিলেন সস্ত্রীক স্টেশনমাষ্টার আবার কারোর মুখে শোনা যায়, তারা দুজনেই আত্মহত্যা করেছিলেন। তদন্তের পর পুলিশও তাদের মৃত্যুর বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে পারে নি। লোকমুখে প্রচলিত, এই ঘটনার পর থেকেই বেগুনকোদর স্টেশনে নেমে আসে কালো রাত।তৎকালীন সময়ে সারাদিন রাত বেগুনকোদর স্টেশন দিয়ে ট্রেন যাতায়াত করত। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই লোকমুখে ক্রমে শোনা যেতে লাগল এই ষ্টেশনের নানান অলৌকিক কাহিনী। কেউ বলতেন, সন্ধ্যে নামলেই এই স্টেশনে নানারকম আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায়, আবার কেউ কেউ বলেন এই স্টেশন দিয়ে ট্রেন পেরোলেই কোনও অশরীরী ছায়ামূর্তি ট্রেনের আগে আগে চলে যায়। ব্যস, সেই থেকে শুরু। বহু রেলকর্মীও একাধিক বার নানারকম ভূতূড়ে ঘটনার নিজেদের চোখে দেখার পর ভয়ে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যায় ধীরে ধীরে বেগুনকোদর ষ্টেশনের এই সমস্ত ভূতূড়ে কাহিনী নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে গোটা জেলা থেকে শুরু করে গোটা দেশ জুড়ে। অশরীরী আত্মার ভয়ে সন্ধ্যা নামলেই শুনশান হয়ে যায় বেগুনকোদর স্টেশন চত্বর। ভয়ে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ষ্টেশনের ত্রিসীমানায় আসা বন্ধ করে দেয় সাধারণ মানুষ। ভূতূড়ে এই ষ্টেশনের খবর রেলের কানে পৌঁছালে ধীরে ধীরে ওই রুটে বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত লোকাল ট্রেন চলাচল। শুধুমাত্র পোড়ো বাড়ির মতো মিশ কালো অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকে পুরুলিয়ার একসময়ের এই কোলাহলপূর্ণ স্টেশন।শুধুমাত্র আপ-ডাউন লাইনে কোনও দূরপাল্লার ট্রেন অন্ধকারের বুক চিরে চলাচল করে, তারপর আবারও নিকশ অন্ধকার গ্রাস করে বেগুনকোদর স্টেশনকে। কিন্তু এই ভূতূড়ে ষ্টেশনের ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই বিপাকে পড়েন স্থানীয় মানুষজন। একেই তো এই ষ্টেশনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অশরীরী ঘটনার ভয় তারওপরে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একে একে যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার জেরে চরম সমস্যায় পড়েন পুরুলিয়া ও ঝালদা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের কয়কশো মানুষ। কারণ, আগে বেগুনকোদর স্টেশন থেকেই সমস্ত লোকাল ট্রেন যাওয়া আসা করায় বিভিন্ন জায়গায় তাদের কাজের জন্য যেতে অনেক সুবিধা হত, কিন্তু বেগুনকোদর স্টেশনে ভূতূড়ে ঘটনা আরম্ভ হওয়ার পর থেকে এবং যাত্রীরা বহুবার অলৌকিক ঘটনা চাক্ষুস করার অভিযোগ করায় একে একে সমস্ত ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। তাই সম্প্রতি এলাকার সাধারণ মানুষ স্থানীয় প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বেগুনকোদর ষ্টেশনের গায়ে লেগে থাকা ভূতূড়ে কাহিনী তকমা ঝেড়ে ফেলতে সচেষ্ট হয়েছেন। যাত্রীদের সচেতন করতে নানারকম প্রচারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কেউ অপপ্রচার করলে তাদের বাধা দেওয়ার চেস্টাও চলছে। ২০০৭ সালে দ্বিতীয়বার বেগুনকোদর স্টেশনে দিনের বেলায় একটি লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এলাকার বাসিন্দারা চান দ্রুত এই ষ্টেশনের আধুনিকীকরন করে ফের আগের মতো ট্রেন চালু হোক পুরুলিয়ার বেগুনকোদর স্টেশন।এখনও স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, রাত নামলে হঠাৎ হঠাৎ এখানে দেখা যায় অদ্ভুত আলো। যত রাত বাড়ে, বাতাসে ভেসে আসে অদ্ভুত সব গন্ধ। মাঝে মধ্যেই নাকি শোনা যায় অশরীরী কণ্ঠস্বর। দিনের আলোতেও বেগুনকোদর মনে ত্রাস সঞ্চার করতে থাকে স্থানীয় লোকজনের। দিনের বেলাতেও অনেকেই নাকি কানের কাছে মানুষের গলা শুনে চমকে উঠেছেন অনেকে। চার পাশে তাকিয়ে কাউকেই নাকি দেখা যায়নি। অনেক সময়ে আবার লোকজনের গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে অশরীরী কেউ! আচমকা ধাক্কা খেয়ে সচেতন হয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু যাঁর সঙ্গে ধাক্কা লাগল, তাঁর দেখা মেলেনি! এমনই নানা গল্প স্থানীয় লোকজনের মুখে মুখে ফেরে।</p>